মাদকাসক্তি ও এইডস

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - NCTB BOOK

মাদকাসক্তি হলো ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর এমন একটি মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া যা জীবিত ব্যক্তি ও তার সেবনকৃত মাদকের পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়। যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ঐ দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টি, পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের উদগ্র আকাঙ্খা ক্রমশই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, এমন দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি বা নেশাকে বোঝায়। সিপারেট, বিড়ি, তামাক, চুট, মদ, গাঁজা, চরস, আফিম, মারিজুয়ানা, হেরোইন, মরফিন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি মাদকদ্রব্য। এ এক আংকর নেশা। এই নেশার আসর হলে সহজে কেউ পরিত্রাণ পায় না। আমাদের শরীরের নিজৰ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে শরীরে কোনো রোগজীবাণু প্রবেশ করলে সহজে শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু এমন কিছু ক্ষতিকর ভাইরাস আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। এইচআইভি তেমনই একটি ভাইরাস। এইচআইভি ভাইরাস রক্ত, বীর্য, যোনিরস, বুকের দুধ প্রভৃতির মাধ্যমে অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়। কোনো মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, ক্ষণিক চিকিৎসার সে সুস্থ হয়ে উঠে না। এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তির অবস্থাকে বা রোগকে এইডস বলে।


এ অধ্যায় শেষে আমরা

  • মাদকাসক্তির কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা করতে পারব।
  • তামাক ও মাদক দ্রব্য সেবনের কুফল ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ধূমপান ও মাদক থেকে বিরত থাকার কৌশল বর্ণনা করতে পারব।
  • ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ মাদকমুক্ত থাকার ব্যাপারে অন্যদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ধূমপান ও মাদকের কুফল উপলব্ধি করে এগুলি পরিহার করার ব্যাপারে সচেতন হব।
  • মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে সমর্থ হব।
  • HIV-AIDS-এর ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বাংলাদেশে HIV-AIDS-এর বিস্তার ও পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • HIV-AIDS-এর বিস্তার প্রতিরোধে করণীয় ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • HIV-AIDS-থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার উপায় বর্ণনা করতে পারব।
  • HIV-AIDS-প্রতিরোধে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবাদানের ধরন সম্পর্কে জানতে পারব।
  • HIV-AIDS-এর পরিণতি উপলব্ধি করে পরিশীলিত জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ হব।

 

 

 

Content added || updated By

#.

নিচেরঅ নুচ্ছেদটি পড় এবং ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

রানা প্লাজা ধসে আহত শামীমকে চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় । ডাক্তার তার অত্যধিক রক্তক্ষরণ দেখে দ্রুত রক্ত দেওয়ার কথা বলে ।শামীমকে বাচানোর তাগিদে উপস্থিত একজন ব্যক্তি তাকে দ্রুত এক ব্যাগ রক্ত দেন। রক্ত নেওয়ার পর অন্যান্য চিকিৎসা শেষে দুই সপ্তাহ পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে শামীম বাড়ি ফিরে যায়। মাস ছয়েক পর তার শরীরে চুলকানি ও শুকনা কাশি দেখা দেয়। এসবের পাশাপাশি ঘন ঘন জ্বর, পাতলা পায়খানাও হতে লাগল ।সে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কিছু ঔষধ দেন এবং পরিবারকে তার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে পরামর্শ দেন ।

শামীম কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে?

পাঠ-১ : মাদকাসক্তি, তামাক ও মাদকদ্রব্য এবং তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল :

মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি বা নেশাকে বোঝায়। যে সব দ্রব্য সেবন বা পান করলে তীব্র নেশার সৃষ্টি হয় সেগুলো মাদকদ্রব্য। কোনো কোনো ঔষধকে ব্যবহারগত কারণে মাদকদ্রব্য বলা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করলে এবং এর প্রতি আসক্তি জন্মালে সেটাও মাদকদ্রব্যের আওতায় পড়ে। অতএব যেসব দ্রব্য সেবন করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং সেগুলোর প্রতি সেবনকারীর প্রবল আসক্তি জন্মে সে সব দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। যেমন- বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, মদ, গাঁজা, ভাং, হেরোইন, আফিম, পেথিডিন, ফেনসিডিল, ঘুমের ঔষধ ইত্যাদি। যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকদ্রব্যের প্রতি তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়। তারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। যদি কোনো কারণবশত তারা মাদক গ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাদের মধ্যে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের সৃষ্টি হয়। যেমন- মেজাজ খিটখিটে হয়, ক্ষুধা ও রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, আচরণে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।
ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য

১. ঔষধ সেবন করলে রোগমুক্তি ঘটে, মাদক সেবনে শরীরের নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
২. ঔষধ গ্রহণের মাত্রা নির্ধারিত থাকে, মাদকের মাত্রা নির্ধারিত থাকে না ।
৩. অসুখ সেরে গেলে ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু মাদকে আসক্ত হলে সহজে ছাড়া যায় না

বাংলাদেশে যে সকল মাদকদ্রব্য প্রচলিত আছে সেগুলো হলো হেরোইন, আফিম, পেথিডিন, ফেনসিডিল, গাঁজা জাতীয়— মারিজুয়ানা, ভাং, চরস, ইয়াবা এবং ঘুমের ঔষধ, মদ এবং তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য। তামাক গাছের পাতা থেকে তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য তৈরি হয়। তামাক পাতায় নিকোটিন থাকে যা এক ধরনের মাদক। তামাক পাতা দিয়ে বিড়ি, সিগারেট, চুরুট,পানের জর্দা, গুল, নস্যি ইত্যাদি তৈরি করা হয় ।

মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যম : যারা মাদকসেবী তারা নানা পদ্ধতি ও মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সেবন করে। যেমন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো, ট্যাবলেট, পাউডার বা সিরাপ হিসেবে খাওয়া, পানীয় হিসেবে পান করা, ধূমপানের মাধ্যমে গ্রহণ করা। ধূমপানেরও আবার নানা ধরন আছে। যেমন—সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুঁকা ইতাদি ।


তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল : তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবন বলতে প্রধানত ধূমপানকে বোঝায়। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে পৃথিবীতে প্রতি ৮ সেকেন্ডে শুধু ধূমপানজনিত কারণে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। যারা ধূমপান করে তারাও ধূমপায়ী ব্যক্তির ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়া থেকে অন্যরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য সেবনের কুফলসমূহ হচ্ছে-

১. মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যেমন- শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে, চাপ সহ্য করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। তাছাড়া মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়।

২. পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে। মাদকসেবী পরিবারের সদস্যদের সাথে উগ্র আচরণ করে, পরিবারের শান্তি বিনষ্ট করে।

৩. শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস , খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয় ৷ করে,

৪. কিছু কিছু মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি-এর সংক্রমণের আশংকা বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যনালি ও ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনির রোগ, রক্তচাপ প্রভৃতি বহুবিধ রোগের সৃষ্টি করে।

৫. আর্থিক ক্ষতি হয়। নেশার টাকা যোগাতে গিয়ে সংসারে অভাব ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।

কাজ-১ : মাদক সেবনকারীদের মাদকের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়। এই নির্ভরশীলতার ফলে কী কী ঘটে উল্লেখ কর।

১.

২.

৩.

8.

কাজ-২ : মাদকদ্রব্য গ্রহণের ৪টি কুফল লেখ ।

১.

২.

৩.

৪.

 

Content added || updated By

পাঠ-২ : ধূমপান ও মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকার উপায় এবং এ সম্পর্কে অন্যদের ভূমিকা :

ধূমপান ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে পূর্ববর্তী পাঠে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য বিষয়টি সম্পর্কে শুধুমাত্র জানাই যথেষ্ট নয়। মানুষের জীবনের জন্য ক্ষতিকর এমন মারাত্মক অভ্যাসটি যাতে ত্যাগ করা যায় সেজন্য এখনই সে বিষয়ে বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রথমই দরকার কোনো অবস্থাতেই ধূমপানসহ অন্য কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। কারণ কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে অজানা বিষয়ের প্রতি প্রচণ্ড কৌতূহল থাকে। এই কৌতূহল ও উত্তেজনাবশে কিংবা বন্ধুবান্ধবসহ কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ধূমপান বা মাদক সেবন করতে পারে। এই কৌতূহল বা উত্তেজনা সারা জীবনের জন্য তার অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কৌতূহল মিটাবার পূর্বে ঐ কিশোর বা কিশোরীকে ভাবতে হবে ধূমপান বা মাদক সেবনের ফলে কী কী কুফল দেখা দেবে এবং এই কুফলসমূহ বিবেচনা করলে তার মাদক সেবন করা উচিত হবে কি না। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে হলে নিচের ধারাবাহিক কার্যক্রমগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

১। ধূমপান ও মাদক সেবনের ফলে কী অবস্থা হয়, প্রথমে তা মনে মনে ভাবতে হবে।

২। ধূমপান বা মাদক সেবনের ফলে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অভিভাবক এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বেন, লজ্জিত হবেন। শিক্ষকেরা বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না। এ অবস্থা যাতে না হয় সেজন্য ভাবতে ও বিবেচনা করতে হবে।

৩। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মনস্থির করবে। ধূমপান বা মাদক সেবন না করার বিষয়ে প্রথমেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এই সর্বনাশা কাজ থেকে বিরত থাকা যায় ।

৪। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিস্থিতি, সমস্যা, বিপদ চিহ্নিত করে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে

হবে। এই তথ্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা অন্য কোনো সূত্রে সংগ্রহ করতে হবে। তথ্যের

প্রেক্ষিতে করণীয় সমাধান চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে।

৫। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে শুধু নিজে বিরত থাকলে চলবে না, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, পরিচিতজনকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে তারা যেন এই মারাত্মক নেশা থেকে দূরে থাকে।

৬। মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর দিক জেনে সবার উচিত এ থেকে নিজে মুক্ত থাকা, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যদেরকে এর কবল থেকে মুক্ত থাকতে অর্থাৎ মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করা।

মাদকমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে অন্যদের ভূমিকা : মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবদের ক্ষতিকর প্রভাব বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। তবে সব বন্ধুই কি মাদকাসক্ত, নিশ্চয়ই না। দু'একজন হয়ত দুর্ভাগ্যক্রমে মাদকাসক্ত হয়, তবে বেশির ভাগ বন্ধুই ভালো হয়। এই ভালো বন্ধুরাই অন্য বন্ধুদেরকে মাদক গ্রহণ না করার জন্য প্রভাবিত করতে পারে। মাদকমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে বন্ধু বা সমবয়সী ছাড়াও আরও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- সন্তানের প্রতি অভিভাবকের সতর্ক দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে । এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক আদর্শস্বরূপ। শিক্ষকের আদেশ ও উপদেশ শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে পালন করে। শ্রেণিকক্ষে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষকের আদেশ ও উপদেশে শিক্ষার্থীরা মাদক পরিহার করে চলতে পারে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরাও স্নেহ, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়ে ছেলেমেয়েদের মাদকমুক্ত থাকতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম যেমন- পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন মাদক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। এর বাইরে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা যায় ।

 

কাজ-১ : মাদকদ্রব্য গ্রহণের এমন ৪টি কুফল লিখ যা ভাবলে তুমি কখনো ধূমপান ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে পারবে না ।

কাজ-২ : তোমাদের মাদ্রাসাকে ধূমপানমুক্ত রাখার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? লেখ।



 

Content added || updated By

পাঠ-৩ : মাদকাসক্তির ঝুঁকি, ঝুঁকি মোকাবেলার কৌশল :

যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাদের সংখ্যা অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। মাদকাসক্তদের একটা বড় অংশ হচ্ছে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ। এ ছাড়াও রয়েছে পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত লোকজন যেমন- শ্রমিক, ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, বাস-ট্রাক চালক, অন্যান্য পেশার লোকজন এবং যৌনকর্মী। তাদের মধ্যে মাদকাসক্তি বিস্তারের বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে মাদক প্রাপ্তির সহজলভ্যতা। অন্যান্য যে সব কারণ রয়েছে তা হলো হতাশা, বেকারত্ব, পারিবারিক অশান্তি, কৌতূহল, মন্দ বন্ধুদের কাছ থেকে এক ধরনের চাপ ইত্যাদি।

মাদকাসক্তির ঝুঁকি : মাদকদ্রব্য গ্রহণের জন্য কিশোর-কিশোরীদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। বন্ধু বা সহপাঠীদের মধ্যে কেউ মাদকসেবী থাকলে সে প্রস্তাব দিতে বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া যারা মাদক ব্যবসায়ী বা মাদক বিক্রেতা তারাও কিশোর-কিশোরীদের মাদক গ্রহণের জন্য নানাভাবে প্ররোচিত করতে পারে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্ধুরা চাপ সৃষ্টি করলে যদি কেউ চাপের কাছে নতি স্বীকার করে মাদক গ্রহণ করা শুরু করে তবে তার সর্বনাশ ঘটে। আবার মাদক গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। বন্ধু বা সহপাঠী ছাড়া অন্য কেউ যদি মাদক গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং তা প্রত্যাখ্যান করলে তার দ্বারা ক্ষতির আশংকা থাকে। এ ধরনের ঝুঁকির পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ।

ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা : প্রথমেই দেখতে হবে মাদক গ্রহণের জন্য যে বা যারা প্ররোচনা দিচ্ছে তার বা তাদের আচরণ, ক্ষমতা, প্রভাব কেমন। এসব দিক বিবেচনা করে মাদক গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে যাতে কোনো ক্ষতির আশংকা না থাকে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সময় নিজেকে সংযত রাখতে হবে। আর যদি সরাসরি 'না' বলতে পারা না যায় তাহলে কৌশলে পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সে স্থান ত্যাগ করতে হবে। চাপ সৃষ্টি করা ব্যক্তি যদি বন্ধু বা পরিচিত জন হয় তবে এমনভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয়। আর যদি মনে হয় যে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না তাহলে তাকে মাদকের কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং এ পথ থেকে তাকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। আর মাদক গ্রহণের জন্য যদি চাপ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তবে অবিলম্বে মা-বাবা বা অভিভাবক কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে বিষয়টি জানাতে হবে। সর্বনাশা মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হলে কৌতূহলের বশবর্তী হয়েও কোনো মাদক গ্রহণ করা যাবে না। যে কোনো মাদক নিঃসন্দেহে নিজের, পরিবারের ও সমাজের জন্য খারাপ। সর্বোপরি মাদক গ্রহণ না করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে।

কাজ-১ : মাদকাসক্তির ফলে নিজের ও পরিবারের উপর কী কী প্রভাব পড়ে ?

কাজ-২ : কোনো ব্যক্তি মাদকগ্রহণ করে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে একটি ক্ষেত্রের সমস্যা উল্লেখ করে তার সমাধান কী হবে তা সংক্ষেপে লেখ ৷

 


 

Content added || updated By

পাঠ-৪ : মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনমত গঠন

মাদকাসক্তি বর্তমান সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং তা ক্রমান্বয়ে প্রকট আকার ধারণ করছে। যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয় না বটে, কিন্তু ভাই-বোন, মাদক গ্রহণের কারণে তারা নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। মাদকের কারণে শুধু যে মাদকাসক্ত ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, মাদকাসক্ত ব্যক্তির মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার জীবনে এর প্রভাব পড়ে এবং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদকের অর্থ যোগাড় করার জন্য চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানিসহ বিভিন্ন অসামাজিক ও বেআইনি কাজকর্মে লিপ্ত হয় যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতি থেকে যুব সমাজসহ দেশের সবাইকে রক্ষা করতে হলে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার করতে হবে। মাদকদ্রব্য যাতে সহজে না পাওয়া যায় তার জন্য যে আইন আছে সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করে তুলতে জনমত গঠন করতে হবে।
বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্লোগান ব্যবহার করা ছাড়াও আরও যেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা যায় সেগুলো হচ্ছে-

১. রেডিও-টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদিতে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য গ্রহণের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা।

২. মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা ।

৩. মাদকবিরোধী সভা-সমিতি, পথ নাটক, গান, কবিতা, নাটক, যাত্রা পালা, অভিনয়, র‍্যালি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। ৪. মসজিদ, মন্দির, গির্জায় মাদকবিরোধী ধর্মীয় বিধান তুলে ধরা ও মাদক গ্রহণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা এবং মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।

৫. মাদক ও ধূমপানবিরোধী দিবস পালনসহ অন্যান্য সময়ে মাদ্রাসায় মাদকবিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। যেমন— দলগত আলোচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার প্রদর্শন ইত্যাদি।

৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিস, সংস্থা, দপ্তরকে ধূমপান ও মাদকমুক্ত এলাকা ঘোষণাপূর্বক তা কার্যকর করা

৭. মাদ্রাসার খাতা, নোটবুকের মলাটে মাদকবিরোধী স্লোগান দিয়ে সকলকে সচেতন করা।

জনসচেতনতা সৃষ্টির সময় “মাদক কিছুই দেয় না বরং কেড়ে নেয় সবকিছু” এরূপ স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে। মাদকসেবীরা মনে করে মাদক মানুষকে দুঃখ ভুলতে সাহায্য করে এবং আনন্দ দেয়— এটা একেবারেই ভুল ধারণা। মাদক বরং আরও যন্ত্রণা টেনে আনে। কাজেই পরিচিতজনের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে তাকে এই সর্বনাশা পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত।

কাজ-১ : এমন একটি স্লোগান তৈরি কর যার সাহায্যে মাদকের বিরুদ্ধে জনগণকে আকৃষ্ট ও সচেতন করা যাবে।

কাজ-২ : তোমার এলাকায় ধূমপানবিরোধী প্রচারণা চালাতে তুমি কী করবে?

 



 

Content added By

পাঠ-৫ : HIV-AIDS-এর ধারণা ও বিস্তার :

বিশ্বে যে কয়টি ঘাতক ব্যাধিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে এইডস অন্যতম। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক বা নিরাময় ব্যবস্থা থাকলেও এইডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ঔষধ এখনও তেমনভাবে আবিষ্কার করা যায়নি। ফলে এইডস-এর পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে শরীরে কোনো রোগের জীবাণু প্রবেশ করলে সেটা সহজে শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু এমন কিছু ভাইরাস আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আস্তে আস্তে দুর্বল করে এবং এক সময় তা সম্পূর্ণভাবেই নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। এমনই একটি ভাইরাসের নাম এইচআইভি (HIV)।

এইচআইভি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী : এইচআইভি ও এইডস দুটি ইংরেজি শব্দ। শব্দ দুটির পূর্ণাংগ রূপ হচ্ছে— Human Immuno Deficiency Virus (HIV) এবং Acquired Immune Deficiency Syndrome (AIDS)। এইচআইভি একটি অতি ক্ষুদ্র বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা কোনো মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপায়ে প্রবেশ করে রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংসের মাধ্যমে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রোগ যেমন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া প্রভৃতিরোগে ঘন ঘন আক্রান্ত হয় এবং কোনো চিকিৎসায় এ সমস্ত রোগ ভালো হয় না। এইচআইভি সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির এরূপ অবস্থাকে এইডস (AIDS) বলে। এইচআইভি কোনো ব্যক্তির শরীরের প্রবেশের পর সাথে সাথে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। এইডস হিসেবে প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। সাধারণত এটা মনে করা হয়ে থাকে যে এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বছর হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় পরে এইডস ধরা পড়ে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে ৷

এইডস এর লক্ষণসমূহ : এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। তবে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে রোগে আক্রান্ত হয় সে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। যেমন- (১) এক মাসের বেশি সময় ধরে এক টানা কাশি, (২) সারা দেহে চুলকানিজনিত চর্মরোগ, (৩) মুখ ও গলায় এক ধরনের ঘা, (৪) লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, (৫) স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এইডস-এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো-
১। শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া ।
২। এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা বা থেমে থেমে পাতলা পায়খানা হওয়া।
৩। বার বার জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
৪। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা ।
৫। শুকনা কাশি হওয়া ইত্যাদি ।
উল্লেখ্য যে, কারোর মধ্যে উপরের একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে HIV সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।

এইচআইভি এবং এইডস-এর বিস্তার : এইচআইভি একটি নীরব ঘাতক। এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এইচআইভি ও এইডস কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা আমাদের জানা প্রয়োজন। বায়ু, পানি, খাদ্য বা কারোর সংস্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরের ভিতরে রক্ত, বীর্য, যোনিরস, মায়ের বুকের দুধ এগুলোতে HIV বাস করে। সেই HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনিরস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলে বা মায়ের বুকের দুধ খেলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি বিস্তার লাভ করে, তা হলো-
১। অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন- এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বের এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৮০% অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের কারণে হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যোনিরসের মাধ্যমে জীবনসঙ্গীর দেহে এইডস-এর ভাইরাস প্রবেশ করে।
২। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ-এইডস আক্রান্ত কোনো মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন কিংবা তার ব্যবহৃত সুচ- সিরিঞ্জ অন্য মানুষ ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই একই সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করে মাদক গ্রহণ করে থাকে।
৩। মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ—এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত মায়ের নিকট থেকে তিনটি পর্যায়ে শিশুর শরীরে এর ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-
(ক) গর্ভকালীন সময়ে।
(খ) প্রসবকালীন সময়ে ।
(গ) মায়ের দুধ পান করে।
যে সব কারণে এইচআইভি-এইডস-এর বিস্তার লাভ করে না তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
(১) হাঁচি, কাশি, কফ-থুতু বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ।
(২) এক সাথে এক ঘরে বসবাস করলে, একসাথে বা একই থালা-বাসনে খাওয়া দাওয়া করলে।
(৩) একসাথে খেলাধুলা বা একই ক্লাসে পড়াশোনা করলে।
(৪) আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মেলালে, কোলাকুলি করলে এবং তার কাপড় ব্যবহার করলে।
(৫) মশা বা কোনো পোকা-মাকড়ের কামড়ে।
(৬) আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে।
(৭) একই গোসলখানা বা শৌচাগার ব্যবহার করলে। এইচআইভি ও এইডস এর মতো মরণব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলের এ বিষয়ে জানতে হবে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কাজ-১ : এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত হলে যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা বোর্ডে লেখ এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
কাজ-২ : এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় এবং ছড়ায় না এ বিষয়ে নিচের বিবৃতির বিপরীতে সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি' লেখ
 

 

                       বিবৃতি        স/মি                                     বিবৃতি         স/মি                 
১. এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে  
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা করলে
 
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই থালায় খাবার খেলে   ৮. আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে  
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিজ শরীরে গ্রহণ করলে   ৯. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে
 
 
৪. সুস্থ ব্যক্তির শরীরে জীবাণুমুক্ত রক্ত সঞ্চালন
করলে
  ১০. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির
মাধ্যমে
 
৫. মশা বা পোকা-মাকড়ের কামড়ে  
১১. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে
 
৬. আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে      












 

Content added By

পাঠ-৬ : বাংলাদেশে এইচআইভি ও এইডস এর ঝুঁকি এবং ঝুঁকিমুক্ত থাকার উপায় :

এইডস একটি আর্থ- সামাজিক ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশেও এইডস-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এটি এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কারণে অচিরেই আমাদের দেশেও এইডস মারাত্মক রূপ নিতে পারে। যেহেতু প্রতিকারহীন এ রোগের চরম পরিণতি মৃত্যু, তাই সকলকে বিশেষ করে কিশোরী বা অল্পবয়সী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের কিশোরীরাই কিশোরদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে-

১। আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান।
২। মেয়েরা এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ছেলেদের তুলনায় কম অবহিত।
৩। নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে পুরুষ দ্বারা মেয়েদের নিগৃহীত হওয়া।
৪। মেয়েদের অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধাদানের ক্ষমতার অভাব।
৫। মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য।
৬। অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে তাদের চিন্তা ও আচরণে অনেক কৌতূহল জন্মে। পরিবারের বড়দের কাছে এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারে না। তাই তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ থাকে এবং অনেকে অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ রকম পরিস্থিতিতে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে যায় ।

এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহ : HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস বীর্যে, যোনিরসে, রক্তে ও মায়ের দুধে বাস করে। এই চার জাতীয় তরল পদার্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য বা যোনিরস অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হলে এইচআইভির সংক্রমণ ঘটে। এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহ হচ্ছে—

(ক) মাদকগ্রহণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে ইনজেকশনের একই সুচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহার ।

(খ) অপরীক্ষিত রক্ত শরীরে গ্রহণ ।

(গ) অপারেশনের সময় অপরিশোধিত জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার।

(ঘ) এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্ৰহণ ৷

(ঙ) অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন।

এইচআইভি এবং এইডস থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার উপায়
১. ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ : পরিহার করতে হবে।
২. আবেগ প্রশমন : প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়েই কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করে। এজন্য কিশোর-কিশোরীদের কৌতূহল বা আবেগ প্রশমনের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। বড়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে সব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে পারলে এই কৌতূহল দূর ও আবেগ প্রশমিত হয় ।
৩. ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনৈতিক প্রস্তাবে ‘না’ বলার দক্ষতা ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
৪. ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা : নেশা করা বা মাদকাসক্ত হওয়া, অনৈতিক দৈহিক বা শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি কোনো ধর্ম বা সমাজ অনুমোদন করে না। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেক কমে যায়।
৫. এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি : এইচআইভি এবং এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার, র‍্যালির আয়োজন, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির ধারক বয়াতির গ্রামীণ পালাগান, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সহজে উদ্বুদ্ধ করা যায়। এসব কার্যক্রম ব্যক্তির আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


কাজ-১ : শিক্ষার্থীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহের একটি তালিকা প্রণয়ন করে প্রত্যেক দল একটি আচরণের উপর শ্রেণিকক্ষে আলোচনা কর।

কাজ-২ : এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল কোনটি তা উল্লেখ করে এর সপক্ষে যুক্তি দাও, শ্রেণিতে দলীয় ভিত্তিতে উপস্থাপন কর।


 

Content added By

পাঠ-৭ : বাংলাদেশে এইচআইভি ও এইডস-এর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান :

বর্তমান বিশ্বে এইডস এবং যৌনরোগ সংক্রমণ বহুল আলোচিত বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয়। এইডস এমনই মারাত্মক যে, তা মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয় ও একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্ৰস্ত করে। এইডস মানব সভ্যতা এবং উন্নয়নের ক্রমাগত বিকাশের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রতিদিন আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। UNAIDS-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীব্যাপী প্রতি বছর নতুনভাবে এইচআইভি আক্রান্তদের অর্ধেকই হচ্ছে ২৫ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী/যুবক-যুবতী। আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন কারণ, যেমন- শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব ও আর্থিক অসামর্থ্য বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের অল্পবয়সী জনগোষ্ঠীকে এইচআইভি সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। বাংলাদেশেও এইচআইভি/এইডস-এর প্রাদুর্ভাব হয়েছে। তবে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তবুও বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ করে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশসমূহ যথা- ভারত, মায়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে এইচআইভি/এইডস-এর ব্যাপক বিস্তৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই এ দেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার আগেই আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর যেমন মাদক গ্রহণকারী, মহিলা ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, পেশাদার রক্ত বিক্রেতা, ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী ইত্যাদির মধ্যে সামগ্রিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ১% এর নিচে। একই সুচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহারের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার প্রায় মহামারী পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার সামগ্রিকভাবে কম হলেও (অর্থাৎ শতকরা এক ভাগের নিচে) আগামীতে এ হার এরকমই থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এইডস মহামারী আকারে শুরুতেই প্রকাশ পায় না। বাংলাদেশেও যে এ মহামারীর বিস্ফোরণ ঘটবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এইডস-এর কোনো কার্যকর প্রতিকার ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার  করা সম্ভব হয়নি। তাই এর প্রতিরোধের ব্যবস্থার কথাই বলতে হয়। সমগ্র বিশ্ববাসী প্রতি বছর ১লা ডিসেম্বর ‘বিশ্ব এইডস দিবস' পালন করে। এই বিশেষ দিনে বিশ্বের সকল দেশ স্ব স্ব অবস্থান থেকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে এইডস প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

কাজ-১ : শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কী কী ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস মহামারীর রূপ নিতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি কর এবং শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর। |

কাজ- ২ : বিশ্ব এইডস দিবস পালনের জন্য একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর ।



 

Content added By

পাঠ-৮ : এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা :

বর্তমান বিশ্বে একটি প্রতিকারহীন রোগের নাম এইডস, যার অনিবার্য পরিণতি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু। বাংলাদেশেও এই রোগের কিছু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এইচআইভি আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যেহেতু এইচআইভি-এর কোনো প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এর সংক্রমণ প্রতিরোধই এটাকে নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়। কাজেই এর প্রতিরোধের ব্যবস্থার উপরই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এইডস প্রতিরোধকল্পে ১৯৮৫ সালে জাতীয় এইডস কমিটি গঠন করে। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে গত শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশ সরকার এইডস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্তদের সহায়তা দানের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, পরামর্শদান এবং কিছুটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আশার আলো সোসাইটি, জাগরণী মেডিকেল ক্লিনিক, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ, হাসাব (HSAB HIV/AIDS AND STD ALLIANCE IN BANGLADESH), ক্যাপ (CAAP-CONFIDENTIAL APPROACH TO AIDS PREVENTION) প্রভৃতি এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্তদের সেবাদানসহ এ বিষয়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সেবাদানমূলক কার্যক্রমের মধ্যে (১) কাউন্সেলিং বা পরামর্শদান এবং (২) পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্য।

কাউন্সেলিং বা পরামর্শদান : এইচআইভি এবং এইডস-এর কোনো প্রতিষেধক টিকা বা ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে মানসিক সমর্থন ও শক্তি, সঠিক চিকিৎসা ও সেবাযত্ন পেলে এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন সুস্থ ও সবল থাকতে পারে। তাই তাদেরকে পরামর্শদান বা কাউন্সেলিং অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রথমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বেসরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠানসমূহ এইডস আক্রান্তদের বাড়ির আশেপাশে সুবিধাজনক স্থানে উঠান বৈঠক করে থাকেন। এইচআইভি ও এইডস কী, এর বিস্তার, আক্রান্তদের সাথে ব্যবহার ও সহমর্মিতা ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়ে এইডস আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। তাদেরকে বিভিন্ন সেবাদানসহ চিকিৎসা সুবিধাও দিয়ে থাকে।

রোগ উপশমের পরামর্শ দেওয়ার কৌশল : কোনো ব্যক্তির রক্তে এইচআইভি আছে কিনা তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষার আগে ও পরে পরামর্শ বা কাউন্সেলিং করা হয়। এই কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যক্তি এইচআইভি পজিটিভ হলে সে মারাত্মকভাবে ঘাবড়ে যায়। কারণ এইডস একটি মরণব্যাধি এবং এর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সেবাযত্ন, উপযুক্ত খাদ্য, সহমর্মিতা ও সাহস পেলে এইডস আক্রান্তরাও দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারে। পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-

১। রক্ত পরীক্ষার পর পরামর্শ : কোনো ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি ভাইরাস ধরা পড়লে সে ব্যক্তি প্রথমেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাই রক্ত পরীক্ষার পর পরামর্শ বা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে তার মনোবল অটুট রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

২। অন্যান্য রোগ থেকে সতর্ক থাকা : কোনো ব্যক্তির রক্ত এইচআইভি পজিটিভ হলে ধীরে ধীরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বিভিন্ন সুযোগ-সন্ধানী রোগ যেমন- ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, মুখে ঘা, নানা প্রকার চর্মরোগ, নিউমোনিয়া, প্রচণ্ড জ্বর ইত্যাদি আক্রমণ করে। তখন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঔষধ খেতে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।

৩। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা : এইডস থেকে সেরে উঠার যদিও কোনো চিকিৎসা এখনও বের হয়নি। তবে এন্টিরেট্রোভাইরাল জাতীয় ঔষধের মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ থাকা যায়, জীবন দীর্ঘায়িত করা যায়।
পুনর্বাসন : অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এইডস আক্রান্তদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন
কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান দিতে পারে। 

কাজ-১ : একটি বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হিসেবে এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে পরামর্শ দেবে ধারাবাহিকভাবে লেখ।


কাজ-২ : একজন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের যে সকল পরামর্শ দিবে তার একটা তালিকা তৈরি কর।

 

 

Content added By
Promotion